
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা
প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে
- আপলোড সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ০২:২৮:১৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ০২:২৮:১৫ অপরাহ্ন


পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা সবাই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য যারা দায়ী, তারা আমরা সবাই এখানে হাজির। আমরা আসামি। তিনি বলেন, প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং পরিবেশ ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি পরিবেশ সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপকদের মধ্যে জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার, জাতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পুরস্কার এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের পুরোনো কবিরা বলে গেছেন, সাগরের সব পানি যদি কালি হত, বনের সব গাছ যদি কলম হতো, তাহলে এই অপরাধের বর্ণনা শেষ করা যেত না। একই অপরাধ আমরা করে যাচ্ছি প্রতিদিন। তিনি বলেন, আজকের পৃথিবী বিভিন্ন ধরনের সংকটে জড়িত। যুদ্ধবিগ্রহ, প্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের সামনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু যে চ্যালেঞ্জটা আমরা এখনো অনেকে উপলব্ধি করতে পারছি না, সেটা হলো প্রকৃতির বিধ্বংসী-রূপ। এটা প্রকৃতির দোষ না, আমাদের দোষ। আমরা মানুষ যারা এখানে বসবাস করি, প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কথা। কিন্তু তাল মিলিয়ে না চলে উল্টো পথে চলি। দোষটা প্রকৃতির না, দোষটা হলো প্রকৃতি-বিধ্বংসী এক জীব, যার নাম মানুষ।
অন্তর্বর্তী সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটি বাস্তবায়ন করলে বন্যপ্রাণী ফিরে আসবে বনে। নতুন প্রজন্ম দূষণমুক্ত শহর দেখতে পারবে। তরুণ প্রজন্মের অসীম শক্তি জুলাইয়ে দেখেছে। তরুণরাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন গড়ে তুলেছে। তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের সবচেয়ে সৃজনশীল। তাই তাদের জলবায়ু মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক না থাকায়, পৃথিবীর জলাশয়গুলো পলিথিন ও প্লাস্টিকে ছেয়ে গেছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে। প্লাস্টিক এমন এক জিনিস, যার জন্ম আছে মৃত্যু নেই। পৃথিবীর সব কিছুর মৃত্যু আছে, তার মৃত্যু নেই। এসব ক্রমাগত বাড়ে, ফলে তা সবকিছু জয় করে ফেলে। আমরা দিবস উদযাপন করে ঘরে ফিরে যাবো, যথারীতি প্লাস্টিক ব্যবহার করবো। আমরা যদি আমাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন না করি, এই যুদ্ধে সামগ্রিকভাবে মানুষের পরাজয় অবধারিত। সেজন্য এর থেকে কীভাবে আমরা বের হবো সেটা হলো আজকের আলোচ্য বিষয়, বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, খালবিল কৃষিজমি গ্রাম ও নগরের আনাচে-কানাচে পলিথিন আর প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। কোনো কোনো নদীর তলদেশে ৭-৮ ফুট প্লাস্টিকের আস্তরণ পড়ে গেছে। তার মধ্যে একটা হলো পানির বোতল। আমাদের মন্ত্রণালয় এটাকে একটা সিম্বল হিসেবে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আন্দোলন শুরু করেছে। প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে আনার উপায় এখনও যতটা সম্ভব এটি বর্জন করা। এর উৎপাদন বন্ধ করা। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের বিষ। এটি পৃথিবীর সব প্রাণীর জন্য বিষ, শুধু মানুষের জন্য নয়। ঘটনাটি ধীরে ধীরে হচ্ছে বলে আমরা আমলে নিচ্ছি না। পৃথিবীতে মানুষ বাড়ছে, বাংলাদেশেও মানুষ বাড়ছে। তার সঙ্গে জনপ্রতি প্লাস্টিক বিষের পরিমাণও বাড়ছে। তাই প্লাস্টিকের বিষ থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে আনার প্রধান উপায় বর্জন করা। এর উৎপাদন বন্ধ করলে দুনিয়া অচল হয়ে যাবে এমন নয়। অর্থনৈতিক লাভের জন্য পরিবেশের ক্ষতি করে যাব এমন আত্মবিধ্বংসী চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্ত হতে হবে। জীবন বাঁচাতে হলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে জলবায়ু, প্রকৃতিগত ও জীববৈচিত্র ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রাত্যহিক জীবন যাপনে পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে দৈত্যাকারে হাজির হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জলবায়ু সংকট। সে ক্রমাগত হুঙ্কার দিচ্ছে, হয় আমরা থাকবো, না হয় তোমরা থাকবে। দুইজন একসঙ্গে থাকতে পারবে না। তাদের জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে আর আমাদের অসহায়ত্ব দেখছে। আমাদের উদ্যোগের অভাব দেখছে। আমরা সব জয় করে নিলাম তোমরা কিছুই করতে পারলে না। এই অসহায়ত্বের মধ্যে আমরা ২০২৫ সালে এই দিবস পালন করছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ